স্বদেশ ডেস্ক: গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া এড়িয়ে ভারতকে পাকাপাকি ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মহলে মাঝে মাঝেই এই আশঙ্কার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বুধবার প্রথমে ছাত্র পরিষদের প্রকাশ্য সভায়, তার পরে বিধানসভার বক্তৃতায় তার এই বক্তব্য নথিবদ্ধ করান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি আজ ভবিষ্যদ্বাণী করে যাচ্ছি, দেশ প্রেসিডেন্শিয়াল ফর্ম অফ গভর্নমেন্টের দিকেই যাচ্ছে।’’ বিরোধী কংগ্রেস এবং বাম নীতিগতভাবে মমতার ওই বক্তব্যকে খণ্ডন করেনি। শুধু বিজেপি বলেছে, মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-র প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে গাঁধী মূর্তির পাদদেশের সভায় মমতা এ দিন প্রথমে বলেন, ‘‘আমরা কি প্রেসিডেন্শিয়াল ফর্ম অফ গভর্নমেন্টের দিকে যাচ্ছি? এক ভোট, এক জাতি, এক রাজনৈতিক দল, এক নেতা?’’ সমাবেশের পরেই বিধানসভায় গিয়ে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা শঙ্কা হচ্ছে। সেই শঙ্কাটা আমি বিধানসভায় নথিভুক্ত করে যাচ্ছি। এক ভোট, এক জাতি, এক দল এবং এক নেতা— এই ভাবে আমরা কি প্রেসিডেন্শিয়াল ফর্ম অফ গভর্নমেন্টের দিকে যাচ্ছি? আমরা চাই, গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক।’’
বিধানসভায় মমতা ফের অভিযোগ করেন, দেশের বর্তমান শাসক দল সব ধ্বংস করে কেবল এক জনকেই প্রতিষ্ঠা দেয়ার চেষ্টা করছে। সব মনীষীকে অস্বীকার করছে তারা। তার কথায়, ‘‘যে মানুষটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য সবচেয়ে বেশি লড়াই করেছেন, সেই গাঁধীজিকে খুন করল যারা, যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তারাই সব বড় বড় কথা বলে! ওরা কোথা থেকে লড়ল? স্বাধীনতা সংগ্রামে তো ওরা ছিলই না!’’
আলোচনায় বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানও বলেন, ‘‘মানুষের কাছে আবেদন করছি, যারা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধরিয়ে দিয়েছে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চরবৃত্তি করেছে, তাদের সুবিধা করে দেবেন না।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তারাই এখন ইউএপিএ বিল সংশোধন করে গণতন্ত্র হত্যাকারী রাওলাট আইনের নতুন চেহারা দিচ্ছে।’’
রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে মমতার শঙ্কার প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য পরে বলেন, ‘‘দেশ রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে কি না, বলতে পারব না। তবে এই কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সংবিধানের বিভিন্ন ধারাকে উপেক্ষা করে পরিবর্তন করার স্বৈরাচারী প্রবণতা প্রবল।’’ সিপিএমের সুজনবাবু বলেন, ‘‘আমরা বহু আগেই এই শঙ্কা প্রকাশ করেছি। এটা ভাল যে, মুখ্যমন্ত্রীও এখন মুখে অন্তত সেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন।’’ তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘পায়ের তলার জমি সরে গিয়েছে বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন।’’